ঢাকা, শনিবার   ০৫ জুলাই ২০২৫

সঠিক সতর্ক বার্তার অভাবে প্রতি বছর হাওরে ডুবছে ফসল 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৪৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

আবহাওয়া পূর্বাভাস ও সঠিক সতর্কবার্তার অভাবে প্রতি বছর ফ্লাস ফ্লাডে (ফসল ডোবা বন্যা) ডুবছে হাওরাঞ্চলের কৃষকের ফসল। প্রতি বছর ফসল কাটার সময় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাওর। এতে একমাত্র ফসল হারিয়ে পথে বসতে হচ্ছে কৃষকদের।   

বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে সেভ দ্য সোসাইটি এন্ড থা-ারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম আয়োজিত হাওরাঞ্চলের সাংবাদিক ও কৃষকদের সঙ্গে এক আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন আলোচকরা। সভায় বক্তারা বলেন, আকষ্মিক বন্যায় হাওরঅঞ্জলের কৃষকের ফসল বন্যায় ডুবে যাওয়ার মূল কারণ হলো- নদ-নদীর নব্যতা, আবাহাওয়া সংবাদেও প্রচার প্রচারনা না থাকা। এসব সমস্যার সমাধানে দ্রুত খনন, হাওর অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আবাহাওয়া সংবাদ পরিবেশন এবং ওই সব সংবাদ কৃষকের দৌড় গড়ায় পৌছে দেয়ার জন্য মাইকিং- লিফলেট বিতরণের আহ্বান জানান। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওর এলাকার কৃষক জাকারুল ইসলাম বলেন, মানুষের সন্তান জন্ম নিলে যেমন তাকে সব সময় আলাদাভাবে কেয়ার করতে হয়, দেখাশোনা করতে হয়। আমরা যেসব কৃষক হাওরে ধান চাষ করি, ফসল নিয়ে তাদের অবস্থা এমন হয়। সব সময় ভয়ে থাকি কখন  যেন পানি এসে তলিয়ে যায়। কোদাল নিয়ে গ্রামবাসী বাধের উপর বসে থেকে পাহারা দেই। একই অঞ্চলের কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, ধান কাটার সময় আমরা কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার টাকা রোজ করে ২০ থেকে ৩০ জন করে লেবার নিয়ে আসি। যেবার বন্যা হয়, সেবার লেবারের বেতন দিতে গিয়ে আমাদের পথে বসতে হয়। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌমরী বিম্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চার ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, সারাদেশে উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশ আসে হাওরাঞ্চল থেকে। কিন্তু কোনো রকম বন্যা হলেই ফসলগুলো তলিয়ে পথে বসছে কৃষক। এসব অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার পূর্বাভাস জানানোর জন্য লাল পতাকা টানিয়ে দেয়। কিন্তু কৃষক এই পতাকা উড়ানোর অর্থ বোঝে না। অকাল বন্যার সঠিক ব্যবস্থাপনা হবে একটি সমন্বিত প্রয়াস। ড. দাশ বিশেষ করে আলোকপাত করেন, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও প্রান্তিক কৃষকদের সমন্বয়। পাশাপাশি ঋতুভিত্তিক হাওর বিশেষায়িত পূর্বাভাস নিয়ে উন্নততর গবেষণার অবকাঠামো নির্মাণ করা।  অকাল বন্যার সাথে সাথে ঝড় ও বজ্রপাতের  কারণে জন জীবন রক্ষায় পূর্বাভাসের উপযুক্ত ব্যবহারে জন মানুষের সচেতনতা খুবই গুরুত্ব বহন করে। গবেষণা ও সরকারি সব ধরণের উদ্যোগের সুফল যেন সাধারণ মানুষ পেতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা দরকার।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক টেলিভিশনের সাংবাদিক আবদুল্লাহ শাফি বলেন, আগেও বৃষ্টি হতো, কিন্তু হাওরাঞ্চালে বন্যা হতো না। কারণ আগে নদীর নাব্যতা ছিল। এখন পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পলিতে নাব্যতা হারিয়েছে প্রায় সব নদী। এ কারণে ইদানিং ভারতে একটু বৃষ্টি হলেই এ অঞ্চলের নদীগুলো উপচে পানি প্রবেশ করে হাওরে। এতে তলিয়ে যায় কৃষকের ফসল। দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক যোবায়ের আহসান যাবের বলেন, হাওরাঞ্চলে বন্যার ভয়ে অনেক কৃষক নিজে চাষ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা জমি অন্যের কাছে বর্গা দিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন মাইক্রো ক্রেডিট সমিতি থেকে লোন নিয়ে জমির মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে বর্গা নিয়ে তা চাষ করার পর বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় পথের ফকির হয়ে যাচ্ছে অনেক কৃষক। 
 
তিনি বলেন, বন্যা শুরু হওয়ার আগে পেকে যাবে এমন ধানের যাত উদ্ভাবন করে তা কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ। একই সঙ্গে এসব অঞ্চলের বাধ নির্মাণসহ ধান কাটার মেশিন কিনতে সরকারীভাবে অনেক বেশি ভর্তুকি দেয়া উচিৎ। প্রয়োজনে সরকারিভাবে পেডি হারভেস্টার মেশিন নামানো উচিৎ। 

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, হাওরাঞ্চলের কৃষকের প্রধান সমস্যা দুইটি। প্রথমত তারা সময় মতো বন্যার সঠিক পূর্বাভাস পায় না।  দ্বিতীয়ত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার না করায় বন্যার সময় দ্রুত ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারেনা।

সংগঠনের গবেষণা সেল প্রধান আব্দুল আলীম বলেন, ঝড়, জলচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের পক্ষে ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে মোকাবিলা করা সম্ভব। মোকাবিলা হল- ভারতের পাহাড়ী অঞ্চলে অতি বৃষ্টি হলে সেখান থেকে পানি নেমে বাংলাদেশের হাওরে প্রবেশ করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এই সময়ের মধ্যেই ধান কেটে ফেলা সম্ভব। তবে ভারতে যে বৃষ্টি হচ্ছে এই খবরটা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সহজ শর্তে কৃষককে ধান কাটার মেশিন কিনতে সহায়তা করতে হবে। 

হাকালুকি হাওরাঞ্চলের সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ বন্যায় হাকালুকি হাওরের শত শত বিঘা জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন কৃষকের তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কৃষকের দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ে। এসব কৃষকের ফসল রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। চ্যানেল আই এর সাংবাদিক আকতার হোসেন বলেন, এক সময় কৃষক লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হতো, এখন প্রযুক্তির কল্যাণে ট্রাকটর দিয়ে অল্প সময়ে বহু জমি চাষ করা সম্ভব। তাই কৃষকদেও মধ্যে প্রযুক্তির ব্যাবহার বাড়াতে হবে। আবাহাওয়া অফিসের সহযোগিতায় পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। পূর্বাভবাস অনুযায়ী যে কয়দিন পাওয়া যাবে ওই সময়ে ধান কাটার যন্ত্র ব্যাবহাওে কিছুটা হলেও কৃষকের ঘরে ফসল তোলা সম্ভব।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন - চ্যানেল আই এর সাংবাদিক আকতার হোসেন, দিপ্ত টিভির সাংবাদিক সাদিয়া চৌধুরী, একুশে টেলিভিশনের নুরুন নবী, রেডিও আমার এর অন্তু মুজাহিদ, আজকালের খবর এর মোজাম্মেল হক তুহিন, বার্তা ২৪ এর মাহফুজুল ইসলাম প্রমুখ।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি